সর্বশেষ
অক্টোবর ১২, ২০২৫

জাপানে ইতিহাস! সানায়ে তাকাইচি প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন

Spread the love

জাপানের রাজনীতিতে এক নতুন দিগন্ত। ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-র নতুন নেতা নির্বাচিত হয়েছেন হার্ডলাইন রক্ষণশীল সানায়ে তাকাইচি (৬৪)। এর ফলে তিনিই হতে চলেছেন এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী এই দেশটির ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। সংসদ কর্তৃক নিশ্চিত হলেই শুরু হবে নতুন যুগ।টোকিও: ৪ অক্টোবর, ২০২৫জাপানের রাজনীতিতে শনিবার (৪ অক্টোবর, ২০২৫) এক ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সূচনা হলো। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-র নেতৃত্ব নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন সাবেক অর্থনৈতিক নিরাপত্তামন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। এই জয়ের ফলে তিনি জাপানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে দৃঢ় পদক্ষেপ রাখলেন। দেশটির সংসদ কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হলেই সানায়ে তাকাইচি হবেন জাপানের প্রথম নারী সরকার প্রধান, যা দেশটির পুরুষ-শাসিত রাজনৈতিক কাঠামোতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন।নেতৃত্বের দৌড়ে জয় ও প্রতিদ্বন্দ্বী:পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচনে তিনি পরাজিত করেছেন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কোইজুমি-র পুত্র শিনজিরো কোইজুমিকে। প্রথম রাউন্ডে এগিয়ে থাকার পর রান-অফে তিনি কোইজুমিকে ১৮৫-১৫৬ ভোটে হারান। পার্লামেন্ট কর্তৃক তার এই জয় নিশ্চিত হওয়ার কথা রয়েছে ১৫ অক্টোবর।কে এই সানায়ে তাকাইচি?১৯৬১ সালে জন্ম নেওয়া সানায়ে তাকাইচি ১৯৯৩ সালে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাপানের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে (পার্লামেন্ট) প্রবেশ করেন। তিনি একজন কট্টর রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের অনুসারী। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা এবং চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক উপস্থিতির একজন স্পষ্টবাদী সমালোচক। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের ভক্ত হিসেবে পরিচিত তাকাইচি একবার কলেজের হেভি মেটাল ব্যান্ডে ড্রামস বাজাতেন।তিনি অতীতে অর্থনৈতিক নিরাপত্তামন্ত্রী (২০২২-২০২৪), অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রীসহ সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে নতুন নেতৃত্ব:নতুন নেতা হিসেবে তাকাইচি এমন এক সময়ে দলের দায়িত্ব নিচ্ছেন, যখন এলডিপি অভ্যন্তরীণ সংকটে জর্জরিত এবং দেশটির অর্থনীতিতে মন্দা চলছে। তার নির্বাচনী প্রচারে তিনি জাতীয় প্রতিরক্ষা জোরদার, আবনমিক্স (Abenomics)-এর আদলে অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ, এবং অভিবাসন বিরোধী কঠোর অবস্থানের উপর জোর দিয়েছেন। একইসাথে, বৈশ্বিক লিঙ্গ বৈষম্য সূচকে জাপানের দুর্বল অবস্থানকে স্বীকার করে তিনি তার মন্ত্রিসভায় লিঙ্গ সমতা নরডিক দেশগুলির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।লিঙ্গ সমতার চ্যালেঞ্জ:লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে জাপান এখনও অনেক পিছিয়ে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (WEF) ২০২৫ সালের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্টে জাপান ১৪৮টি দেশের মধ্যে ১১৮তম অবস্থানে রয়েছে, যা জি-৭ দেশগুলির মধ্যে সর্বনিম্ন। তাকাইচির বিজয় এই প্রেক্ষাপটে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হলেও, তিনি মূলত পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোতে অভ্যস্ত দলের একজন সদস্য। তিনি সম্রাট পরিবারের পুরুষ-শাসিত উত্তরাধিকার, সমকামী বিবাহের বিরোধিতা এবং বিবাহিত দম্পতিদের জন্য ভিন্ন পারিবারিক নাম রাখার অনুমোদনের মতো প্রগতিশীল পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন।তবে, প্রথম নারী এলডিপি প্রধান হিসেবে তার উত্থান নিঃসন্দেহে জাপানের রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করল।সূত্র (Source): উইওন (WION), এসোসিয়েটেড প্রেস (AP), রয়টার্স (Reuters), দ্য গার্ডিয়ান (The Guardian), ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (WEF)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *