গাজার আকাশে এখনো ধোঁয়া, ধ্বংস আর ক্ষুধার চিহ্ন। ইসরায়েলি অভিযানের দুই বছর পূর্তিতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে—এ পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা অন্তত ৬৭ হাজার ১৭৩ জন এবং আহতের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৬৯ হাজার ৭৮০। অর্থাৎ যুদ্ধের আগে গাজায় যে মানুষগুলো জীবিত ছিলেন, তাদের প্রতি নয়জনের একজন আজ মৃত বা আহত।মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষে গোটা অঞ্চল আজ মৃত্যুর দোরগোড়ায়। অধিকাংশ মানুষ গৃহহীন, কাজহীন, খাদ্য ও ওষুধবিহীন জীবনে দিশেহারা।এই বিধ্বস্ত জীবনের গল্পগুলোই তুলে ধরেছে সিএনএন।মহম্মদ ফরাজ: “একবেলা খাবার পেতেই যুদ্ধ”গাজার শহীদ শাহজায়িয়া এলাকার মুদি দোকানি মাহমুদ নাবিল ফরাজ একসময় সুখী জীবনযাপন করতেন। আজ তার ও তার পরিবারের খাবার জোটে দিনে মাত্র একবার। অনেক দিন যায়, যখন তিনি নিজে না খেয়ে সন্তানদের মুখে তুলে দেন শেষ টুকরো রুটি।“এটাই আমাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়,” বললেন ফরাজ। “আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে। দুধ, ডিম, ফল কিছুই নেই। এক কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ ডলারে।”যুদ্ধের আগে তিনি ওজনদার মানুষ ছিলেন—২৫৩ পাউন্ড। এখন তার ওজন নেমেছে ১৫৪ পাউন্ডে।রাগাদ হাম্মুদা: “আমার ভাইবোনদের স্বপ্ন এখন কাঠ কুড়ানো”২০ বছর বয়সী রাগাদ হাম্মুদা বলছেন, “আমার ছোট ভাইবোনদের স্বপ্ন একসময় ছিল পড়াশোনা আর বিদেশে গিয়ে কিছু করা। এখন তাদের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন এক মুঠো রুটি বা একটু পানি।”তার পরিবার দিনে একবার খেতে পারে, তাও যদি ক্যানজাত খাবার মেলে। দশজন আত্মীয়কে হারিয়েছেন তিনি, যাদের মধ্যে আছেন ৮০ বছরের দাদি তামামও।মোহাম্মদ সাঈদ আল-খতিব: “আমার চেহারা আমি নিজেই চিনতে পারিনি”একসময় গাজা সিটির আল-জাহরা এলাকায় সুখী পরিবার ছিল মোহাম্মদ সাঈদ আল-খতিবের। এখন ছয়বার ঘরছাড়া। বন্ধু হঠাৎ একদিন তার ছবি তুলে দেখালে তিনি হতবাক—নিজেকে চিনতে পারেননি।“আমরা পচা চাল, পোকায় ভরা ময়দা খেয়েছি, মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার খেয়েছি—শুধু বেঁচে থাকার জন্য,” বললেন তিনি।মোহাম্মদ মাতার: “আমি না খেয়ে থাকি, যাতে সন্তান স্কুলে যেতে পারে”গ্রাফিক ডিজাইনার মোহাম্মদ মাতার আগে জীবন উপভোগ করতেন। এখন তিনি স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় দিন কাটান। “আমরা এক কেজি ময়দা দুই দিনের বেশি চালাতে পারি না,” তিনি বলেন। “নিজে না খেয়ে থাকি যাতে ছেলে স্কুলে যেতে পারে।”ইয়াদ আমাওয়ি: “আমরা হারিয়েছি জীবন, হারিয়েছি আশা”দু’বছরের এই যুদ্ধে ইয়াদ আমাওয়ি দেখেছেন নিজের সন্তানদের পুষ্টিহীনতায় ক্ষীণ হয়ে যেতে। চার বছরের ছেলে ইউসুফ এখন লিভারের প্রদাহে ভুগছে।“আমরা বাবা-মা খাই না যাতে বাচ্চারা একটু খেতে পারে,” বললেন তিনি। “আমরা বিদ্যুৎ, পানি, খাবার সব হারিয়েছি—হারিয়েছি জীবনের স্বাভাবিকতা।”জাতিসংঘ, ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজায় সংঘটিত এই সহিংসতাকে “গণহত্যা” বলা যেতে পারে—যদিও ইসরায়েলি সরকার তা অস্বীকার করছে।গাজার আজকের বাস্তবতা—ক্ষুধা, মৃত্যু, ও এক জাতির অশেষ বেদনার প্রতিচ্ছবি।
সূত্র: CNN International