গাজায় ইসরায়েলের প্রায় দুই বছরের অভিযানের ফলে জাতিসংঘ সমর্থিত এক প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে ভয়াবহ মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ। জাতিসংঘ-সমর্থিত Integrated Food Security Phase Classification (IPC) আগস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর শেষে গাজার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী দুর্ভিক্ষের মুখে পড়বে। ইতোমধ্যেই খাদ্য সংকট, গণবোমাবর্ষণ, বাস্তুচ্যুতি এবং স্বাস্থ্য অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে মানবিক বিপর্যয় চরমে উঠেছে।শুধু গাজা গভর্নরেটেই (সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল) অর্ধ কোটি মানুষকে “ক্ষুধা, অনাহার ও মৃত্যুর চক্রে” ঠেলে দিয়েছে ইসরায়েলের অভিযান। শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত ৫ বছরের নিচে অন্তত ১ লাখ ৩২ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে IPC।জাতিসংঘের খাদ্য অধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি মাইকেল ফাখরি অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে “ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।” তাঁর ভাষায়, “ইসরায়েল সবচেয়ে দক্ষ ক্ষুধার মেশিন তৈরি করেছে।”তবে ইসরায়েল এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তারা সাহায্য প্রবেশে বাধা দেয় না এবং UN রিপোর্ট “পক্ষপাতমূলক।” ইসরায়েলি সংস্থা COGAT দাবি করেছে, গাজায় প্রতিদিন মাথাপিছু ৪,৪০০ ক্যালোরি প্রবেশ করেছে। কিন্তু জাতিসংঘের তথ্য বলছে, বাস্তবে মানুষ পাচ্ছে মাত্র ১,৪০০ ক্যালোরি—যা টিকে থাকার ন্যূনতম মানের অনেক নিচে।ফলে গাজায় এখন পর্যন্ত অপুষ্টি বা অনাহারে মারা গেছে ৪৫৫ জন, যার মধ্যে ১৫১ জন শিশু। কেবল আগস্ট ১৫ থেকে অক্টোবর ১-এর মধ্যে ১৭৭ জন প্রাণ হারিয়েছে।অন্যদিকে, কৃষিজমি ধ্বংস, মাছ ধরা নিষিদ্ধ এবং খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে হামলায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। গাজার মাত্র ১.৫% জমি চাষযোগ্য অবস্থায় আছে। খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়ে অনেকে নিহত হচ্ছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে অন্তত ১,১৭২ মানুষ “সহায়তা কেন্দ্রের কাছে” নিহত হয়েছে।জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, তাত্ক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, পূর্ণ মানবিক সহায়তা প্রবেশ এবং স্থানীয় খাদ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠন ছাড়া এই দুর্ভিক্ষ ঠেকানো সম্ভব নয়।সূত্র: CNN, IPC (UN-backed), UNRWA, WHO