দুদক মামলার একদিন পর এনবিআর সদস্য মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরীকে কাস্টমস, এক্সাইজ ও মূসক ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদে বদলি করা হয়। এবং আজই তাকে ওই দায়িত্বে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সদস্য) বা ওএসডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাধারণ আচরণবিধি অনুযায়ী যদি যেকোনো কর্মকর্তা দুর্নীতি বা অবৈধ সম্পদ অভিযোগের মুখে পড়ে, তখন তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত বা তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখা হয়। তাহলে কেন বেলালকে কেবল ওএসডি করা হলো — সেই কারণ ও সম্ভাব্য উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করেই নিচের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো।মামলা ও বদলির পটভূমিগত ৭ অক্টোবর, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জ্ঞাত আয়ের উৎসের বাইরে প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে বেলালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলায় বলা হয়েছে, তিনি দাখিল করেছেন ৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য, কিন্তু অনুসন্ধানে পাওয়া যায় ১৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকার সম্পদ। অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার সম্পদ তিনি তথ্য গোপন করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। মামলার পর ৮ অক্টোবর, প্রজ্ঞাপনে তাকে কাস্টমস, এক্সাইজ ও মূসক ট্রাইব্যুনালে তার নতুন দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর আজ (৯ অক্টোবর) তিনি ওই মোড়ক অধীন ওএসডি পদে নিয়োজিত হয়েছেন — অর্থাৎ কার্যকরভাবে তাঁকে সরাসরি তার দায়িত্বে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।সাধারণ প্রক্রিয়া ও ব্যতিক্রমধারণাগতভাবে, এমন অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে একটি দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত করা হয় যাতে তিনি তদন্তে কোনো প্রভাব ফেলতে না পারে। কারণ অভিযোগ ও মামলা চলাকালীন সময়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দায়িত্বে থাকলে প্রমাণাদি সংরক্ষনে জটিলতা, সাক্ষী প্রভাবিত হওয়া বা সরকারি তথ্য-দূষণ ইত্যাদি ঝুঁকি থাকে।কিন্তু এখানে বরখাস্ত না করে কেবল ওএসডি করার পেছনে কিছু সম্ভাব্য কারণ ও লক্ষ্য থাকতে পারে — যা নীচে বিশ্লেষণ করা হলো:সম্ভাব্য কারণ ও উদ্দেশ্য1. যেকোনো আইনগত চ্যালেঞ্জ এড়ানোসরাসরি বরখাস্ত করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ন্যায়বিচার বিচ্যুতির অভিযোগ আনে তার সুযোগ থাকতে পারে। ওএসডি রাখা হলে “দায়িত্বে নেই কিন্তু প্রাপ্য মর্যাদা রক্ষা” করার যুক্তি দেওয়া যেতে পারে।2. প্রভাব বিস্তার অব্যাহত রাখাওএসডি থাকলে ব্যক্তি প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ও যোগাযোগ রূপে আবদ্ধ থাকতে পারে—অর্থাৎ তিনি সরকারি লাইসেন্স অনুযায়ী প্রশাসনিক ও নেটওয়ার্কে প্রভাব রাখতে পারেন।3. গ্রেপ্তার রোধের প্রয়াসযদি একে পুরোপুরি বরখাস্ত করা হতো, তখন গ্রেপ্তার বা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হতো। ওএসডি করে রেখে “কাজ চলছে” বা “অস্থায়ী” এই ছলাভ্যাস দেওয়া যেতে পারে, এবং আইন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা যেতে পারে।4. ক্ষমতা প্রদর্শন ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটএকজন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে (বিশেষ করে উচ্চপদে থাকা কর্মকর্তা) নিজের আশ্রয়শক্তি ও রাজনৈতিক নেটওয়ার্ক সক্রিয় রাখতে চেষ্টায় থাকতে পারে। সংশ্লিষ্ট মহলে এমন গুঞ্জন রয়েছে যে, বেলাল “তৎপরতা চালাচ্ছেন যেন কোনোভাবেই বরখাস্ত বা গ্রেপ্তার করাকে ঠেকানো যায়” — এমন তথ্যও পাওয়া গেছে।5. দায়বদ্ধতার হিংসার সীমাবদ্ধতাপ্রশাসনিকভাবে ওএসডি রাখলেই, ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা সহজ হবে — যেমন অভিযোগ নিরুপণ না হলে পুনর্বহাল, বা নির্ধারিত দায়িত্বে ফিরিয়ে দেওয়া।আগামী কি হবে — জরুরি সুপারিশকাঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ: দ্রুত গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি, আশঙ্কা হলো বেলাল বিদেশে পলায়ন করতে পারে।আদালতের নিকট আবেদন: আদালতের মাধ্যমে রিমান্ড ও নিরাপত্তামূলক অন্তরীক্ষা (judicial custody) আনা যেতে পারে।সরাসরি বরখাস্ত: দুর্নীতি ও গোপন সম্পদের অভিযোগ এবং প্রমাণের ভিত্তিতে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করে বরখাস্ত করা উচিত।তদন্ত কমিটির স্বাধীন গঠন: সরকারের উচ্চ পর্যায়ে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা জরুরি, যাতে প্রভাব, গোষ্ঠীবাদ, রাজনৈতিক বাধা নির্বিশেষে তদন্ত পরিচালিত হয়।সাধারণ সমীক্ষা ও জনমত: জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য পুরো প্রক্রিয়াটির স্বচ্ছতা ও সময়সূচি প্রকাশ করা প্রয়োজন।