কাবুল থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত গোটা আফগানিস্তান অন্ধকারে ডুবে গেছে। সোমবার রাত থেকে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট একযোগে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যার ফলে দেশটির ৪ কোটি ৩০ লাখ মানুষ কার্যত বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট মনিটরিং সংস্থা নেটব্লকস নিশ্চিত করেছে, আফগানিস্তানে প্রায় সব ধরনের নেটওয়ার্ক বন্ধ রয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক টেলিফোন সংযোগও ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত কাবুলগামী বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল হয়।বিদেশে অবস্থানরত আফগান প্রবাসীরা জানাচ্ছেন, তারা প্রিয়জনদের সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারছেন না। দিল্লিতে থাকা মোহাম্মদ হাদি জানান, “একজনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না, বোঝা যাচ্ছে না পরিবার নিরাপদে আছে কিনা।”স্থানীয় সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজ জানিয়েছে, নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় তাদের সংবাদ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এপিসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার কাবুল ব্যুরোও একই অভিযোগ জানিয়েছে।এটি ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর সবচেয়ে বড় এবং সংগঠিত টেলিকম শাটডাউন। দেশটির শীর্ষ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা সরাসরি এ নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বালখ প্রদেশের গভর্নর হাজি জায়েদ। তিনি বলেন, ‘অনৈতিক কার্যক্রম প্রতিরোধে ইন্টারনেট কেটে দেওয়া হয়েছে। বিকল্প একটি ব্যবস্থা দেশের ভেতর চালু করা হবে।’ তবে ‘অনৈতিক কার্যক্রম’ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে, তা পরিষ্কার করেননি।অনলাইনে নির্ভরশীল শিক্ষার্থী ও নারী অধিকারের কর্মীদের জন্য এটি ভয়াবহ আঘাত। ষষ্ঠ শ্রেণির পর মেয়েদের বিদ্যালয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে অনেকেই বিদেশভিত্তিক অনলাইন শিক্ষার ওপর নির্ভর করছিলেন। ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন সেই সুযোগও ভেঙে পড়েছে।ডেনমার্কে থাকা সাংবাদিক ওয়াহিদা ফয়েজি বলেন, “মাত্র কয়েক ঘণ্টা হলো ইন্টারনেট বন্ধ, অথচ মনে হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে পরিবারের সঙ্গেই যোগাযোগ নেই।”মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এর ফলে আফগান জনগণ আরও বেশি বিচ্ছিন্ন ও ভয়-আতঙ্কের মধ্যে পড়বে। নির্বাসিত আফগান সরকারে সাবেক সদস্য মরিয়ম সোলাইমানখিল এক্স-এ লিখেছেন, “আফগান কণ্ঠস্বরগুলো হঠাৎ থেমে গেছে। এ নীরবতা ভীতিকর।”এদিকে অনেকেই স্টারলিংক চালুর দাবি তুলেছেন। তবে এলন মাস্কের মালিকানাধীন এ স্যাটেলাইট সেবা বর্তমানে আফগানিস্তানে পাওয়া যায় না।সূত্র: CNN, TOLO News, Netblocks, AFP, AP