ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এখন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার এক সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রায় প্রতিটি দেশেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সরলীকরণ এবং পড়াশোনার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করায় ইউরোপীয় দেশগুলো বর্তমানে গন্তব্যের শীর্ষে রয়েছে। তবে, এই সুযোগ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হলে প্রতিটি দেশের নির্দিষ্ট নিয়মকানুন, বিশেষ করে আইইএলটিএস (IELTS) স্কোর, স্পাউস ভিসা (Spouse Visa) প্রাপ্যতা এবং ভর্তির ইনটেক (Intake) ও ডেডলাইন (Deadline) সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি।প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে আইইএলটিএস স্কোর ৫.০ থেকে শুরু করে ৭.০ পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সুবিধাজনক পরিসর। বিশেষ করে, চেক রিপাবলিক (Czech Republic) ও সাইপ্রাসের (Cyprus) মতো কিছু দেশে ন্যূনতম আইইএলটিএস স্কোর ৫.০ থাকলেই আবেদনের সুযোগ মিলছে। অন্যদিকে, অস্ট্রিয়া (Austria) ও নরওয়ের (Norway) মতো উন্নত দেশগুলোতে মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য আইইএলটিএস স্কোর ৬.৫ থেকে ৭.০-এর মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়।আইইএলটিএস ছাড়া ও অন্যান্য বিকল্পঅনেক শিক্ষার্থীই আইইএলটিএস-এর ঝামেলা এড়াতে চান। সেই ক্ষেত্রে বুলগেরিয়া (Bulgaria), ফ্রান্স (France), হাঙ্গেরি (Hungary), মাল্টা (Malta) এবং স্পেনের (Spain) মতো কয়েকটি দেশে শর্তসাপেক্ষে আইইএলটিএস ছাড়া (Without IELTS) আবেদনের সুযোগ রয়েছে। বিকল্প ইংরেজি দক্ষতা পরীক্ষার মধ্যে ডুয়োলিঙ্গো (Duolingo) এবং পিটিই (PTE) বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে। তথ্যমতে, বেলজিয়াম (Belgium), ফিনল্যান্ড (Finland), নেদারল্যান্ডস (Netherlands) সহ বেশ কয়েকটি দেশে এই বিকল্প স্কোর গ্রহণযোগ্য।স্পাউস ভিসা: ইউরোপে পরিবার নিয়ে থাকার সুযোগযারা পরিবারসহ বিদেশে পাড়ি দিতে চান, তাদের জন্য স্পাউস ভিসা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক (Denmark), ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং নরওয়ের মতো দেশগুলো স্পাউস ভিসার অনুমোদন দিচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রাকে আরও স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে। তবে, জার্মানি (Germany), ফ্রান্স, ইতালি (Italy) এবং অন্যান্য কিছু জনপ্রিয় দেশে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের জন্য স্পাউস ভিসার সুবিধা নেই।ইনটেক এবং ডেডলাইন সম্পর্কে সতর্কতাভর্তির ইনটেক সাধারণত বছরে দুই থেকে তিনবার হয়ে থাকে—যেমন ফেব্রুয়ারি/সেপ্টেম্বর। তবে, কোনো কোনো দেশে কেবল সেপ্টেম্বর ইনটেকেই মূল ভর্তি প্রক্রিয়া চলে। আবেদনকারীদের অবশ্যই প্রতিটি দেশের ডেডলাইন সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। ডেডলাইন মিস করলে পুরো একটি বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে। যেমন, ফিনল্যান্ডের সেপ্টেম্বরের ইনটেকের জন্য ডেডলাইন সাধারণত জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ। একইভাবে নরওয়ের ক্ষেত্রে তা ডিসেম্বরের ১ তারিখ।দূতাবাস ও ভিসা প্রক্রিয়াভিসা আবেদনের জন্য কিছু দেশের নিজস্ব দূতাবাস না থাকায় পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। যেমন, অস্ট্রিয়ার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় জার্মানির দূতাবাসের মাধ্যমে, আর বুলগেরিয়ার জন্য থাইল্যান্ড/ইন্দোনেশিয়া/ভিয়েতনাম দূতাবাস থেকে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। অন্যান্য বেশিরভাগ দেশের জন্য দিল্লির (Delhi) দূতাবাস থেকে ভিসা প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়।ইউরোপে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের উচিত, প্রতিটি দেশের নিয়মাবলী পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জেনে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে এবং ডেডলাইন মেনে দ্রুত আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা। এই তথ্যগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য ইউরোপের উচ্চশিক্ষার পথ সুগম করবে।সোর্স (Source)এই প্রতিবেদনটি ইউরোপের বিভিন্ন দেশের উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত সর্বশেষ সরকারি নির্দেশিকা এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষাবিষয়ক পরামর্শদাতাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে।