পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে গত কয়েক দিনের বড় নিরাপত্তা অভিযানে নিহত তালেবান কার্যক্রমে জড়িত ১৭ অস্ত্রধারীর মধ্যে অন্তত চারজনকে বাংলাদেশি বলে শনাক্ত করা হয়েছে। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ তাদের পরিচয়পত্র ও ছবি প্রকাশ করলে পরিবারের সদস্যরা নিয়ন্ত্রণহীন শোকে পড়েছেন এবং প্রশ্ন তুলেছেন কীভাবে বাংলাদেশের গৃহহীন বা কর্মহীন তরুণরা আন্তর্জাতিক জঙ্গী কর্মসূচিতে জড়িয়ে পড়ছে। নিহত ফয়সাল হোসেন (বয়স প্রায় ২১-বছর) মাদারিপুরের চুট্টো দুধখালি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। পরিবারের দাবি ছিল যে তিনি দুবাইতে কাজ করতেন এবং বাড়িতে থেকে মাসে এক-দুইবার ফোন করতেন। পাকিস্তানি সূত্রে প্রকাশিত ছবিতে ফয়সালের পরিচয় মিলায়—পরিবারের কাছে তা অস্বীকার করা কঠিন হলেও তারা এখনো বিশ্বাস করতে চাইছে না যে তাদের সন্তানটি সশস্ত্র সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে। ফয়সালের মা বলেন, ফয়সাল বরাবর বলতেন দেশে কাজ নেই, বিদেশে যাবো; সে কীভাবে এসব কাজে লিপ্ত হলো, আমরা বুঝতে পারছি না। বাংলাদেশ পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে ভ্রমণ ও যোগাযোগে বৃদ্ধি পাওয়ায় জঙ্গি সংগঠনগুলোর যেসব দুর্নীতিপূর্ণ নিয়োগ কার্যক্রম আছে সেগুলোও তৎপর হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি জানান, তারা যেসব তরুণদের বিদেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যেতে চাওয়া বা সেখানে যোগাযোগ রাখার তথ্য পেয়েছেন, তাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে এবং তদন্ত চলছে। বিশ্লেষকরা বলছেন যে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও অনিয়ন্ত্রিত ধর্মীয় মিশনে যোগদান—এসব মিলিত কারণ তরুণদের জঙ্গিগোষ্ঠীর কুয়াশায় টেনে নিবে। বিশেষত যেগুলোতে “বিদেশে কাজ” বলে যাত্রা শুরু করে পরবর্তীতে বেআইনি বা সশস্ত্র কর্মকাণ্ডের অংশ হয়ে পড়ে, সেগুলোকে কেন্দ্র করে সামাজিক এবং নীতিগত উদ্যোগ জরুরি। পূর্ববর্তী ঘটনাবলীকেও খতিয়ে দেখলে দেখা যায়, গত বছরও পাকিস্তানের সশস্ত্র সংঘাতে ছয়শো কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী কিংবা বিদেশ গমনকারী কয়েকজন বাংলাদেশি তরুণই ওই অঞ্চলে মৃত অথবা আটক হয়েছেন বলে সংবাদে উঠে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও মনে করিয়ে দিয়েছে, বিদেশে গিয়ে অনৈতিক কার্যক্রমে লিপ্ত হওয়া প্রতিরোধ করতে সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার এবং দূরহীন যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিই সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিকার। পরিশিষ্ট তথ্য ও সূত্র Prothom Alo প্রতিবেদনে ফয়সাল নামের ওই যুবকের পরিবার ও পরিচয় সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। DhakaStream ও The Dissent রিপোর্ট ফয়সালসহ অন্যান্য বাংলাদেশি নিহতের খবর তুলেছে। The Daily Star রিপোর্টে পুলিশের বক্তব্য ও তদন্তের প্রগতি সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়েছে। Samaa TV পাকিস্তানি সূত্রে নিহতের পরিচয় ও উদ্ধারকৃত আইডি সম্পর্কিত খবর প্রকাশ করেছে। সম্পাদকীয় নোট এই প্রতিবেদনে পরিবারের বক্তব্য, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্য এবং বাংলাদেশি আইনশৃঙ্খলা সূত্রকে মিলিয়ে সংবাদ তৈরি করা হয়েছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ ও ব্যবস্থার বিচার-প্রক্রিয়া চলমান। পাঠক যদি ঘটনার সম্পর্কে অতিরিক্ত কৌতূহল রাখেন বা তথ্য দেন, অনুগ্রহ করে আমাদের অফিসিয়াল কন্ট্যাক্টে জানান।