নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে মাত্র দুই বছর আট মাস বয়সী আর্যাতারা শাক্যকে নির্বাচিত করা হয়েছে নতুন জীবন্ত দেবী কুমারী হিসেবে। মঙ্গলবার ঐতিহাসিক দরবার স্কোয়ারে আয়োজিত ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে তাকে দেবী হিসেবে অভিষিক্ত করা হয়।কুমারী বা ‘কুমারী দেবী’ প্রথা নেপালের নিউয়ার সম্প্রদায়ের শাক্য বংশীয় কন্যাদের মধ্য থেকে নির্বাচন করা হয়। নির্বাচনের জন্য শর্ত থাকে দেহে কোনো দাগ না থাকা, চুল, চোখ ও দাঁত নিখুঁত হওয়া এবং অন্ধকারে ভয় না পাওয়া। সাধারণত ২ থেকে ৪ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্য থেকেই এই দেবী নির্বাচন করা হয়।পূর্ববর্তী কুমারী তৃষ্ণা শাক্য, যিনি ২০১৭ সাল থেকে দেবী ছিলেন, বর্তমানে ১১ বছরে পা দেওয়ায় দেবী পদ থেকে অবসর নিয়েছেন। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী কুমারী দেবী কেবল কিশোরী বয়স পর্যন্ত দেবী হিসেবে পূজিত হন। বয়স বাড়ার পর তারা সাধারণ জীবনে ফিরে আসেন।আর্যাতারা শাক্যকে দেবী ঘোষণার পর কাঠমান্ডুর বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে শোভাযাত্রা করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কুমারী ঘর মন্দির প্রাসাদে। এখানেই তিনি পরবর্তী কয়েক বছর বসবাস করবেন। হাজারো ভক্ত তার পদস্পর্শ করে আশীর্বাদ নিয়েছেন এবং ফুল ও অর্থ অর্পণ করেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি রাষ্ট্রপতিসহ উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের আশীর্বাদ দেবেন।আর্যাতারার বাবা আনন্দ শাক্য বলেন, “গতকাল পর্যন্ত সে ছিল আমার কন্যা, আজ সে দেবী হয়ে গেছে।” তিনি আরও জানান, তার স্ত্রী গর্ভাবস্থায় স্বপ্নে দেবীকে দেখেছিলেন, তখন থেকেই ধারণা ছিল সন্তান বিশেষ কেউ হয়ে জন্ম নেবে।যদিও কুমারীর জীবন বিলাসবহুল ও সম্মানজনক, তবুও তা সীমাবদ্ধতায় ভরা। তারা সাধারণত বাইরের জীবনে অংশ নিতে পারেন না, কেবলমাত্র নির্দিষ্ট উৎসবগুলোতে বাইরে আসেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পরিবর্তন এসেছে। কুমারীদের এখন মন্দির প্রাসাদের ভেতরেই ব্যক্তিগত শিক্ষকের মাধ্যমে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়, এমনকি টেলিভিশনও রাখা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত কুমারীদের সরকার মাসিক প্রায় ১১০ ডলার ভাতা প্রদান করে।নেপালের হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় সম্প্রদায়ের কাছে কুমারী দেবী ভক্তি ও শ্রদ্ধার প্রতীক। আর্যাতারা শাক্যার নির্বাচনে দেশজুড়ে উচ্ছ্বাস ও ভক্তিমূলক আবহ সৃষ্টি হয়েছে।সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (AP), CNN