ইসরায়েল গাজা সিটিতে বহুল আলোচিত স্থল অভিযানের সূচনা করেছে। মঙ্গলবার ভোরে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেন যে, এই অভিযান ধাপে ধাপে এবং ধীরগতিতে পরিচালিত হবে। এর আগে এক সপ্তাহ ধরে গাজা সিটিতে উচ্চ ভবন ও অবকাঠামোতে তীব্র বিমান হামলা চালানো হয়। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাতজ ঘোষণা দেন গাজা পুড়ছে।এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের অধীনে গঠিত স্বাধীন অনুসন্ধান কমিশন এক ঐতিহাসিক প্রতিবেদনে জানায় ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে চারটি গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে বেসামরিক মানুষ হত্যাকাণ্ড, মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি সাধন, জন্ম প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জীবনযাত্রার ওপর এমন শর্ত আরোপ যা গোটা জনগোষ্ঠী ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টকে গণহত্যা উসকে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।প্রতিবেদন প্রকাশের পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে বলেছেন সম্পূর্ণ বেপরোয়া ও ভয়াবহ। জার্মানি, নেদারল্যান্ডস এবং সুইডেনও ইসরায়েলের পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে।গাজা সিটিতে বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বসবাস করে যার মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ স্থান ত্যাগ করেছে বলে দাবি করেছে আইডিএফ। তবে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে এই অভিযান প্রায় এক মিলিয়ন মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করতে পারে। ইতিমধ্যে ইউনিসেফ জানিয়েছে নতুন অভিযানের ফলে শিশুদের দুর্ভোগ বহুগুণে বাড়বে।চিকিৎসা সংকটও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আল শিফা হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন ইনকিউবেটরে রাখা নবজাতকদের জীবন এখন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে। অপরদিকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ও খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে ইসরায়েল গাজায় মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করছে।এদিকে ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা কেবল হামাসকে ধ্বংস করতেই এ যুদ্ধ চালাচ্ছে। ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত জাতিসংঘে বলেন আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট হামাসকে নির্মূল করা, জিম্মিদের মুক্ত করা এবং গাজার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।তবে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ এবং গণহত্যা গবেষকরা বলছেন পরিস্থিতি শুধু এক সন্ত্রাসী সংগঠন দমন নয় বরং গোটা জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা। দক্ষিণ আফ্রিকা, আন্তর্জাতিক গবেষক সংস্থা এবং ইসরায়েলের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও ইতোমধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে।অভিযান শুরু হওয়ায় গাজা শহরে নিহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। মঙ্গলবারের বিমান হামলায় অন্তত ৩৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শিশু ও নারীসহ আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে যেখানে চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট বিরাজ করছে।ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন রাষ্ট্র এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি এটিও স্বীকার করেছেন যে দেশটি এক ধরনের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার মুখে পড়ছে যা দীর্ঘদিন স্থায়ী হতে পারে। তবে দেশটি নিজের ওপর নির্ভর করেই এগোবে।সূত্র CNN
